সরকারি যেকোনো সেবা আগের চেয়ে অনেক সহজেই আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিতে পারছি। এখন আর কোনো সেবা নিতে অফিসে বা দূরে গিয়ে অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে না। নাগরিক সেবা সহজীক- রণে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তির যেমন ব্যবহার করছি, তেমনি কেনাকাটাতেও আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই সেবা নিতে পারছি। আমাদের এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নাগরিক সেবা ও ই-কমার্স সেবা নিতে কী কী পদক্ষেপ নিব এবং এর জন্য একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা উপস্থাপন করব।
অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী অহনা বিজ্ঞান বইটির একটি সফটকপি সে তার মায়ের মোবাইলে ডাউনলোড করতে চায়। সে এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই তা ডাউনলোড করে এখন যেকোন সময়ে বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠগুলো পড়ে নিতে পারছে। এই যে অহনা একটি সেবা পেল সেটিকে আমরা বলি নাগরিক সেবা। এনসিটিবি সারা দেশের সকল শিক্ষার্থীর কাছে বই পৌঁছে দেয়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও এই নাগরিক সেবাটি দিচ্ছে
নাগরিক সেবা সাধারণত সরকারি প্রতিষ্ঠান বা স্থানীয় সংস্থা থেকে পেয়ে থাকি। আবার আমরা নিজেরাও জনসাধারণের সুবিধার ও কল্যাণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তি পর্যায়েও সেবা দিতে পারি।
অহনা এনসিটিবির বই ডাউনলোড করে যেই সেবাটি পেয়েছে সেরকম আরো কয়েকটি সেবার নাম আমরা নিচের স্টিকি নোটগুলোতে উল্লেখ করি।
সংস্থা অনুযায়ী নাগরিক সেবার ধরন ভিন্ন ভিন্ন। একেক সংস্থার কাছ থেকে একেক ধরনের সেবা নিচ্ছি। উপরের ছক পর্যালোচনা করলেই আমরা নাগরিক সেবার শ্রেণিবিন্যাস করতে পারি। যেমন:
১. শিক্ষাসেবা
২. স্বাস্থ্যসেবা
৩. কৃষিসেবা
৪. আইন এবং বিচারসেবা
৫. সামাজিক সুরক্ষাসেবা
৬. নাগরিক নিরাপত্তাসেবা
৭. ভূমিসেবা ইত্যাদি
উপরের ধরনগুলো ছাড়াও কি আরো কোন সেবা আমরা শনাক্ত করতে পারি? পরের পৃষ্ঠার ঘরে সেগুলো লিখে ফেলি।
|
ছক-৩.১: নাগরিক সেবার ধরন
চিত্র-৩.২ ও ছক-৩.১ এ আমরা বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবা চিহ্নিত করেছি। এভাবে বিভিন্ন নাগরিক সেবাকে শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী সাজিয়ে নিতে পারি। এর সাথে কোন সেবা কোন প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে আমরা পাবো সেটি বের করতে পারি।
নাগরিক সেবা | সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান |
জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট | সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পরিষদ |
ছক-৩.২: বিভিন্ন ধরনের নাগরিক সেবা ও প্রদানকারী সংস্থার নাম
ছক-৩.২ এ প্রাপ্ত নাগরিক সেবাগুলো পাওয়ার জন্য আমাদের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এখনকার সময়ে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিক সেবা গ্রহণ করার সম্ভাবনা খুব বেশি হচ্ছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নাগরিকরা বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারেন, যেমন শিক্ষাবিষয়ক তথ্য সংগ্রহ, সরকারি দপ্তর থেকে সনদ গ্রহণ, পাসপোর্ট আবেদন ও ভিসা প্রসেসিং, ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া, ব্যাংকিং ইত্যাদি। নাগরিক সেবার সাথে সময়, যাতায়াত ও খরচ জড়িত। এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে এই সকল নাগরিক সেবা গ্রহণ করায় একজন নাগরিকের সময়, যাতায়াত ও খরচ অনেকাংশে কমে গিয়েছে। নাগরিক সেবার কয়েকটি উদাহরণ হলো কিশোর বাতায়ন, ডিজিটাল সেন্টার, জাতীয় তথ্য বাতায়ন, ই-নথি, একশপ, এক পে, জাতীয় হেল্প লাইন-৩৩৩, মুক্তপাঠ, শিক্ষক বাতায়ন, মাইগভ অ্যাপ, ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন ল্যাব ও আই ল্যাব এবং ইনোভেশন ল্যাব ইত্যাদি। নাগরিক সেবাকে আরো সহজ করতে মোবাইল অ্যাপও তৈরি করা হয়েছে।
আমাদের যেকোনো নাগরিক সেবাই এখন খুব সহজে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে শুরু করতে পারি। একটি সেবার জন্য আবেদন করার পর তা কোন পর্যায়ে রয়েছে তা জানা যায় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের কাছে মেসেজ চলে আসে যার মাধ্যমে জানতে পারি যে আমরা সেবাটি কতদিনের মধ্যে পাব।
ব্যবসা বাণিজ্য বা কেনাবেচায় ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা দিনে দিনে বাড়ছেই। জীবনকে সহজ করতে আমরা ইন্টারনেট বা অনলাইন ভিত্তিক এই কেনাবেচাকে ই-কমার্স বলি। অর্থাৎ ই-কমার্স বা ইলেকট্রনিক কমার্স একটি ব্যবসায়িক মডেল, যেখানে পণ্য এবং সেবার বিনিময় ইন্টারনেট বা অনলাইন মাধ্যমে হয়।
বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ই-কমার্সের মাধ্যমে সেবা দিচ্ছে, আবার ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায়ের ব্যবসায়িক সেবাও এখন অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেদের পণ্য বিক্রি করছেন। নিজেরা বা আমাদের পরিচিত কারো ই-কমার্সের মাধ্যমে কেনাকাটার অভিজ্ঞতা থাকলে এবার সেগুলোর কয়েকটি উদাহরণ নিচের ছকে লিখি -
পণ্যের নাম | পণ্যের ধরন |
বই
| শিক্ষা |
| |
| |
| |
|
ছক-৩.৩: ই-কমার্স পণ্য ও ধরন
উপরের তালিকায় যেসব পণ্যগুলো ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কেনা হলো তার সবই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনেছি। এভাবে কেনাকাটা হলো ই-কমার্সের একটা ধরন (ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা)। নিচের তিনটি ঘটনা আমরা প্রত্যেকে নীরবে পাঠ করে ই-কমার্সের আরো কয়েকটি ধরন সম্পর্কে জানব।
দিপুর বাবা খাইরুল সাহেব আধুনিক শপিং সেন্টারে ছেলেদের পোশাক বিক্রি করেন। তিনি ঢাকার চকবাজার থেকে নিজে গিয়ে পাইকারিতে পণ্য কিনে অল্প লাভে বেশি বিক্রি করতেন। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন অনলাইনে পণ্যের জন্য অর্ডার করলে অল্প খরচে পার্সেলের মাধ্যমে চকবাজার থেকে পাইকারি বিক্রেতা পণ্য পাঠিয়ে দেয়। ফলে খাইরুল সাহেব আগের মতোই অল্প লাভে পণ্য বিক্রি করতে পারছেন
সুজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন যে ঢাকা শহরের মধ্যে কেউ যদি ব্যবহৃত পুরনো ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী বিক্রি করতে চান তাহলে যেন তার সাথে যোগাযোগ করেন। প্রায় প্রতিদিনই কেউ না কেউ সুজনকে জানালে তিনি ব্যবহারযোগ্য মালামাল পার্সেলের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। সংগ্রহকৃত মালামাল কিছুটা মেরামত করে পুনরায় বিক্রয়যোগ্য করা হয়।
তমালের মা অপরূপা বাসার জন্য একটা ফ্রিজ কিনেছিলেন। কিন্তু কিছুদিন ব্যবহার করে দেখলেন যে তার এরচেয়ে বড় আকারের একটি ফ্রিজ দরকার। তাই আন্নাফীর মা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি থেকে কেনাবেচার একটি পেইজে কেনা দামের চেয়ে কমে বিক্রির জন্য পোস্ট দিলে আগ্রহী একজন সেটি কিনে নিলেন। কিছুদিনের মধ্যে অপরূপা তারই মতো আরেকজনের কাছ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে নিজের জন্যও পছন্দ মতো একটি ফ্রিজ অল্প দামে কিনে ফেললেন।
এই প্রতিটি ঘটনা থেকে আমরা জানলাম যে ই-কমার্সের ধরন মূলত ব্যবসায়ী আর ক্রেতা বা ভোক্তার যোগাযোগের উপর ভিত্তি করে হয়। নিচের চারটি ঘরে উপরের তথ্য ও ডানের তথ্য সমন্বয় করে ধরন বা শ্রেণিকরণের নাম চারটি ঘরে লিখি। সবার সুবিধার জন্য প্রথম ঘরটি পূরণ করে দেওয়া হল-
উপরের ঘর পূরণের মাধ্যমে আমরা ই-কমার্সের চারটি শ্রেণিকরণ পাই। অর্থাৎ যোগাযোগ ও পণ্য আদান প্রদানের উপর ভিত্তি করে এই শ্রেণিকরণ হয়। নিচের ছকে ই-কমার্সের চারটি ধরনের নাম ও এদের বর্ণনা লিখি-
ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করে ই-কমার্সের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। চাহিদা বিবেচনা না করে ইচ্ছে মতো ই-কমার্সের উদ্যোগ নিলে সফল হওয়া যায় না। এজন্য দরকার চাহিদা নিরূপণ ও পরিকল্পনা। যেকোনো একটা উদ্যোগ শুরু করলেই হবে না, তার আগে টার্গেট গ্রুপ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করা জরুরি। আমাদের আগামী সেশনে নাগরিক বা ই-কমার্সের উদ্যোগ গ্রহণের আগে চাহিদা নিরূপণ ও শর্তাবলি যাচাইয়ের জন্য কিছু কাজ করব।
কার জন্য এবং কোথায় কী চাহিদা তা বিবেচনা করেই সেবার উদ্যোগ শুরু করতে হয়। এই যে 'কার জন্য' এবং 'কোথায় কী চাহিদা' বলতে আমরা বুঝি 'টার্গেট গ্রুপ' ও 'প্রেক্ষাপট'। আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করেই আমরা উপহার তৈরি করেছিলাম। এবার আমাদের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রেও আমরা 'টার্গেট গ্রুপ' ও 'প্রেক্ষাপট' নির্বাচন করব। যেহেতু এই অভিজ্ঞতায় একটি সেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করব তাই ক্ষুদ্র পরিসরে আমাদের সেবার টার্গেট গ্রুপ নির্বাচন করাই ভাল হবে। আমাদের আশেপাশে যারা রয়েছেন তাদেরকেই আমরা টার্গেট গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করতে পারি। নিচের ছবিতে যাদের দেখতে পাচ্ছি তাদের সনাক্ত করে আমরা টার্গেট গ্রুপের তালিকা তৈরি করি।
এই ছবির বাইরেও অন্য কারো জন্য সেবা দেওয়া সম্ভব হলে তাদের কথাও বিবেচনা করতে পারি। এবার আমাদের টার্গেট গ্রুপের নামগুলো লিখি-
উপরে শনাক্তকৃত টার্গেট গ্রুপের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক কী কী সেবার চাহিদা থাকতে পারে তা সনাক্ত করি-
এখনকার সময়ে নাগরিক ও ই-কমার্স সেবার একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলো সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম। যেকোনো সময় যোগাযোগের জন্য প্রত্যেক প্রতিষ্ঠান নিজস্ব একটা পেজ রক্ষণাবেক্ষণ করে। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, এমনকি ব্যক্তিগত পর্যায়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। একজন ব্যক্তি কত কম TCV বা সময় (Time), ব্যয় (Cost) ও যোগাযোগ (Visit) সাপেক্ষে একটা সেবা নিতে পারবে সেদিক বিবেচনা করা হয়। এজন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠান তাদের সেবা পরিকল্পনায় এই দিকটি বিশেষ বিবেচনায় রাখে। শুধু তাই না, শুরুতেই এদিকটি খেয়াল রেখে গ্রাহক বা যিনি সেবা নিবেন তার অভিজ্ঞতা জেনে সেই সেবাকে আরো সহজ করার চেষ্টা করা হয়।
এবার একটি বিদ্যালয় ও একটি স্থানীয় কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য আদানপ্রদানের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি পেজ বা গ্রুপ বা ওয়েবসাইট ভিজিট করব। এখন নিচের প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে খুঁজে বের করি যে ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দেওয়ার সকল শর্ত সেই বিদ্যালয়ের পেজ/গ্রুপটি পূরণ করছে কিনা-
ছক-৩.৭: সেবার মান যাচাইয়ের চেকলিস্ট
ক্রম | প্রশ্ন | হ্যাঁ | না |
১ | এই গ্রুপ/পেজ থেকে বিদ্যালয়ে না এসেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন কিনা? | ||
২ | যেকোনো প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসার জন্য তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করা যায় কিনা? | ||
৩ | শিক্ষাবিষয়ক সাম্প্রতিক সকল তথ্য, নোটিশ বা বিজ্ঞপ্তি শেয়ার করা হচ্ছে কিনা? | ||
৪ | বিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সকল কর্মকান্ডের ছবি ও তথ্য দেওয়া হচ্ছে কিনা? | ||
৫ | শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অবগতির জন্য প্রকাশিত সকল নোটিশ শেয়ার করা হচ্ছে কিনা? | ||
৬ | বিদ্যালয়ের সাথে সম্পর্কিত সকলে এই পেজ/গ্রুপের দ্বারা উপকৃত হচ্ছে কিনা? | ||
৭ | এই পেজ/গ্রুপটি বিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারো দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে কিনা? | ||
৮ | এই পেজ/গ্রুপটি ব্যবহার বা তথ্য প্রচারের জন্য কোনো নীতিমালা রয়েছে কিনা? |
উপরের ছকের উত্তরগুলো জানা হলে এবার আমরা পূর্বশর্তগুলো নিয়ে দলে আলোচনা করি এবং ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সেবা প্রদানে আমাদের কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হবে সেগুলো শ্রেণিতে উপস্থাপন করি।
ছক-৩.৮: সেবা প্রদানের পূর্ব শর্ত
ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সেবা প্রদানের পূর্বশর্ত:
|
ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দেওয়ার আরেকটি দিক হলো ডিজিটাল পেমেন্ট বা আর্থিক লেনদেন। বিশেষ করে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ আর্থিক লেনদেন অনলাইন বা মোবাইলে করা হয়ে থাকে। যেমন, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনো সংশোধনের জন্য চার্জ বা পণ্য কেনার পর টাকা পরিশোধ করতে হয় মোবাইল ব্যাংকিং বা অনলাইন পেমেন্টের মাধ্যমে।
আবার অনেকক্ষেত্রে কোনো সেবায় ডেলিভারির সময়ও সরাসরি আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে। এজন্য যেকোনো উদ্যোগের আর্থিক লেনদেন কেমন হবে তার একটি পরিকল্পনা থাকতে হয়।
গত শ্রেণিতে ই-কমার্সের মাধ্যমে সেবা প্রাপ্তির ধাপগুলো জেনেছিলাম। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠিত কোনো ই-কমার্সের প্লাটফর্ম থেকে সেবা গ্রহণের ধাপগুলো অনুসন্ধান করে বের করেছিলাম এবং ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে ই-কমার্সের সেবা নেওয়ার ধাপগুলো অনুশীলন করি। এই অভিজ্ঞতায় আমরা নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে কী করে একটি উদ্যোগ নেওয়া যায় তার পরিকল্পনা করব।
আমাদের এলাকার তরুণদের মধ্যে একটা ইচ্ছে থাকে যে তারা ভাল আয় রোজগারের জন্য বিদেশ যাবে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যাচ্ছে কেউ না কেউ বিদেশে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত বেতন ও মানসম্মত কাজ পাচ্ছে না। অনেকক্ষেত্রে প্রতারণার স্বীকারও হচ্ছে। খোকন ভাই বিষয়টি অনুধাবন করে এলাকার তরুণদের জন্য বিদেশে চাকুরির তথ্য প্রদান, চাকুরি ও ভিসার আবেদন এবং ভিসা চেকিং সহ এই সম্পর্কিত সকল প্রকার সহযোগিতার জন্য সেবা দেয়া শুরু করলেন। কাজটি তিনি দায়িত্বশীলতা নিয়ে করে থাকেন ও অল্প কিছু সার্ভিস চার্জের বিনিময়ে করেন। এতে তিনি এলাকার তরুণদের কাছে আস্থাভাজন হয়ে উঠেছেন। এই যে, খোকন ভাই এধরনের একটি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলেন, এটি এক ধরনের উদ্যোগ। সাধারণভাবে যে কোনো কাজের কর্ম প্রচেষ্টা বা তৎপরতাই উদ্যোগ। এর মাধ্যমে খোকন ভাইয়েরও নিজ এলাকায় থেকেই আয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হলো।
উদ্যোগ কোনো একজন ব্যক্তি বা কয়েকজন ব্যক্তির সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। একটি উদ্যোগ স্থাপনের চিন্তা বা ধারণা থেকে শুরু করে স্থাপন ও সফলভাবে পরিচালনা করাই হলো ব্যবসায় উদ্যোগ। ব্যবসায় উদ্যোগ বলতে বোঝায় মুনাফা অর্জনের আশায় লোকসানের সম্ভাবনা মাথায় রেখেও ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসা স্থাপনের জন্য দৃঢ় চিত্ত ও মনোবল নিয়ে সফলভাবে ব্যবসা পরিচালনা করা। আর এই উদ্যোগ যে বা যারা গ্রহণ করেন সে বা তাদের বলা হয় উদ্যোক্তা।
|
একটি ই-কমার্সের উদ্যোগ গ্রহণ করতে কী কী ধাপ অনুসরণ করতে হবে তা চিহ্নিত করে এই সেশনে আমাদের একটি পরিকল্পনা করতে হবে। এজন্য আমরা ডিজিটাল মাধ্যমে নাগরিক সেবা ও ই-কমার্স সেবা উদ্যোগের পরিকল্পনা করব। এজন্য শিক্ষকের সহায়তায় আমাদের ক্লাসের প্রতি পাঁচজনে একটি করে উদ্যোগ চিহ্নিত করব এবং টার্গেট গ্রুপ ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে ডিজিটাল মাধ্যমে সেই উদ্যোগের পরিকল্পনার ধাপগুলো লিখব। পরিকল্পনায় নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে-
উপরের বিষয়গুলো বিবেচনা করে সেশন-৩ এ ছক-৩.৬ এ চিহ্নিত সেবাগুলোর জন্য দলগতভাবে কাজ করব। আমাদের পরিকল্পনা প্রণয়নে শিক্ষকের সহায়তায় পরিচিত ও জনপ্রিয় নাগরিক বা ই-কমার্স সেবা প্রদানের কয়েকটি ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ পেজ/গ্রুপ ভিজিট করে উপরের বিষয়গুলো কীভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে সেগুলো অনুসন্ধান করব। সেই আলোকে আমাদের পরিকল্পনাটা সাজিয়ে নিব।
ই-কমার্সের ক্ষেত্রে অবশ্যই বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদের ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। প্রত্যেকটি উদ্যোগের নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে, নিজস্ব উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা থাকে। তাই আমি কোনো ই-কমার্সের উদ্যোগ নেওয়ার সময় অন্যের ই-কমার্স উদ্যোগের সাথে কোনো কিছু যেমন তার লোগো, পণ্য, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি মিলে যায় কিনা তা দেখে নিতে হবে। আগের শ্রেণিগুলোতে আমরা ট্রেডমার্ক, নিবন্ধন, প্যাটেন্ট, কপিরাইট ইত্যাদি সম্পর্কে জেনেছিলাম। ই-কমার্সের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য কারো মেধাস্বত্বের সাথে যেন আমাদের পরিকল্পনা মিলে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর তা না হলে আইনগত ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হতে পারে।
|
নাগরিক বা ই-কমার্স উদ্যোগ গ্রহণ করার পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে। এখন এই পরিকল্পনাটি আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনার জন্য আমরা একটি পোস্টার ডিজাইন করব। প্রত্যেক দলের প্রস্তুতকৃত পোস্টার নিয়ে আমরা একটি মেলার আয়োজন করব। এর আগেও আমাদের কাজের উপস্থাপনার জন্য সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরি করেছিলাম। কনটেন্ট প্রণয়নে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায়। কোনো কোনো সফটওয়্যার বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যায়, আবার কিছু কিছু সফটওয়্যার কিনে ব্যবহার করতে হয়। আবার এসব সফটওয়্যার কম্পিউটারে ইনস্টল করা লাগতে পারে, আবার কোনো কোনোগুলো অনলাইনে সরাসরি কাজ সম্পন্নের মাধ্যমে করে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা যায়। পোস্টার ডিজাইনের জন্য কতগুলো অফলাইন সফটওয়্যার হলো-
Adobe Illustrator
Adobe InDesign
GIMP
Blender
Microsoft Power Point
Canva ইত্যাদি
উপরের সফটওয়্যারগুলোসহ বেশিরভাগ কিনে ব্যবহার করতে হয়। হয়ত কিছুদিনের জন্য ফ্রি ব্যবহার করা যায় বা অল্প পরিসরে ব্যবহারের সুযোগ দেয়। কপিরাইটেড সফটওয়্যার অবৈধভাবে ব্যবহার করা আইনত নিষেধ থাকে। ব্যবহারের আগে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে যে এটির বৈধতা রয়েছে কিনা।
আমাদের পরিকল্পনাটির পোস্টার প্রণয়নের কাজটি করার জন্য এখানে এডোবি ইলাস্ট্রেটর দিয়ে কীভাবে করা যায় তা দেখানো হল। আমরা এই কাজটি শিক্ষকের সহায়তায় বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ল্যাবে করব। যাদের এই সুযোগ থাকবে না তারা একই ডিজাইন পোস্টার কাগজে আকর্ষণীয়ভাবে প্রণয়ন করব।
আমাদের কম্পিউটারে স্টার্ট হতে এরূপ প্রদর্শিত আইকনে ক্লিক করে ইলাস্ট্রেটর সফটওয়্যার চালু করে নিব। চালু করার সাথে সাথে আমাদের কম্পিউটার স্ক্রিনে পরের পৃষ্ঠার লেআউটটি দেখতে পাব-
কাজ ১: ইলাস্ট্রেটরের টুলস পরিচিতি ও একটি নতুন ফাইল তৈরি
ব্যবহারের শুরুতেই আমাদেরকে ইলাস্ট্রেটরে বেশি ব্যবহার করতে হবে এমন টুলগুলো সম্পর্কে পরিচিত হয়ে নিই।
Selection Tool: এই টুলের সাহায্যে ছবির অবজেক্ট সিলেক্ট করা হয়। মাউস ড্র্যাগ করে অবজেক্টকে সুবিধামত স্থানে স্থানান্তর করা যায়। Direct Selection tool: এর মাধ্যমে অবজেক্টকে সরাসরি সিলেক্ট করা যায় ও স্থানান্তর করা যায়। এটি দিয়ে ড্রইং করা যায়। Pen Tool: যেকোনো ধরনের অবজেক্ট ও শেপ তৈরি করা যায়। অর্থাৎ সোজা ও আঁকাবাঁকা লাইন তৈরি করা যায়। Type Tool: এটি দিয়ে টেক্সট বক্সে কিছু লিখা ও এডিট করা যায়। Rectangle Tool: এর সাহায্যে চতুর্ভুজ অঙ্কন করা যায়। এছাড়া এর ড্রপ ডাউন মেন্যুর সাহায্যে বৃত্তাকার, স্টার ইত্যাদি বিভিন্ন শেপ অঙ্কন করা যায়। Paintbrush Tool: পেইন্ট করা, লাইন ও ছবি আঁকতে এই টুল ব্যবহৃত হয়। Pencil Tool: পেন্সিলের মত এটি দিয়ে ছবি আঁকা যায়। Gradient Tool: বহু রং মিশ্রিত অবজেক্ট বানানো যায় এবং রঙ্গের সংমিশ্রণে শেড তৈরি করা যায়। Mesh Tool: এর সাহায্যে যেকোনো স্থানে শেড আনা যায়। Eyedropper Tool: অবজেক্ট এর কোনো একটি অংশের রং অন্যত্র প্রয়োগ করা যায়। Blend Tool: একাধিক অবজেক্ট এর মধ্যে রং ও শেপের সংমিশ্রণ ঘটাতে এই টুলের সাহায্য নিতে হয়
File মেন্যু হতে New অপশনে ক্লিক করে একটি নতুন ফাইল নাম দিয়ে নিচের সেটিংয়ের মতো করে সেভ করি।
কাজ ২: ইলাস্ট্রেটরের ইন্টারফেসের রং পরিবর্তন করা
কাজ-৩: ইলাস্ট্রেটরে বিভিন্ন ধরনের shape drawing করা, rotate করা এবং reflect tool এর ব্যবহার
ইলাস্ট্রেটরে বিভিন্ন ধরনের shape drawing করা
কাজ-৪: ইলাস্ট্রেটরে rotate tool এর সাহায্যে shape rotate করা
কাজ-৫: ইলাস্ট্রেটরে reflect tool এর ব্যবহার
কাজ-৬: ইলাস্ট্রেটরে ফাইল সেভ করা ও প্রিন্ট করা
অনলাইন গ্রাফিক্স সফটওয়্যার দিয়েও আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপনের জন্য পোস্টারের ডিজাইন তৈরি করতে পারি। অনলাইনে ক্যানভা (Canva) বা এরকম আরো অনেক ফ্রি সফটওয়্যার রয়েছে যেখানে টেমপ্লেট বা ডিজাইন দেওয়াই থাকে, শুধুমাত্র তথ্য ও ছবি যুক্ত করলেই চলে। আমাদের সুবিধাজনক সফটওয়্যার ব্যবহার করেই পরিকল্পনা উপস্থাপনার পোস্টার প্রণয়ন করব। সফটওয়্যার ব্যবহার করে পোস্টার প্রণয়ন সম্ভবনা হলে পোস্টার কাগজে আকর্ষণীয় ডিজাইন করেও আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে পারব। শিক্ষকের সহায়তায় দলগতভাবে আমাদের কাজটি সুশৃঙ্খলভাবে কম্পিউটার ল্যাব বা শ্রেণিকক্ষে কাজটি সম্পন্ন করব।
সকল দলের বুদ্ধিবৃত্তিক কাজের স্বত্বাধিকারী বজায় রাখার জন্য আমাদের গ্রাফিক্স উপস্থাপনার সফটকপিতে
নিচের ছকের উদ্দেশ্যভিত্তিক যেকোনো চিহ্ন ব্যবহার করতে পারি। এই চিহ্নগুলোর মানে হলো যে কেউ আমাদের উপস্থাপনাটি শর্ত সাপেক্ষে অবাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করতে পারবে। নিচে চিহ্ন ব্যবহারের অনুমতির ধরনগুলোর দুটি বর্ননা দেওয়া হলো-
সকল দলের কাজ শেষ হলে প্রত্যেকের পোস্টার উপস্থাপন করা হবে। প্রত্যেক দল নিজেদের কাজ প্রিন্টেড পোস্টার অথবা ডিজিটালি উপস্থাপন করতে পারব। এজন্য শ্রেণিকক্ষ বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম বা ল্যাবে যথাযথ সাবধানতা ও ব্যবস্থাপনায় দলগত কাজের উপস্থাপনা সম্পন্ন করতে হবে। শিক্ষকের সহায়তায় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য, প্রতিষ্ঠান প্রধান, অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক (সম্ভব হলে) ও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে দলের সকলে নিজেদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করব। দলগত কাজে সকলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করব। প্রত্যেকে একেকটি ধাপের বর্ণনা করব এবং আগত অতিথি/মূল্যায়নকারীর প্রশ্নের উত্তর দিব। প্রত্যেক দলের উপস্থাপনা অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন ও নিজের এলাকার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখে প্রণয়ন করতে হবে।